সাতক্ষীরায় টানা বৃষ্টিতে সদর উপজেলার বিনেরপোতা ও লাবসার খেজুরডাঙি এলাকায় বেতনা নদীর পানি ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। খননের জন্য বতনা (বেত্রাবতী) নদীর গাবতলা এলাকায় এবং স্লুইজ গেট নির্মাণের জন্য বিনেরপোতার কুলটিখালের মুখে বাঁধ দেওয়ায় প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে নদীর পানি। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না নিলে গত বছরের ন্যায় বেড়িবাঁধ উপচে ও ভেঙে গিয়ে সাতক্ষীরা সদর ও তালার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকায় খেজুরডাঙি হাইস্কুলের বিপরীতে বেতনা নদীর পাশে কুলটির খালের মুখে একটি স্লুইজ গেট নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এজন্য বাঁধ দিয়ে কুলটির খালের মুখে আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে বেতনা নদী খননের জন্য আশাশুনির গাবতলা এলাকায় নদীতে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে গত প্রায় ১৫দিনের টানা বৃষ্টিতে কলারোয়া ও ঝাউডাঙ্গা এলাকার দিক হতে উজানের ঢল নামায় বিনেরপোতা এলাকায় বেতনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রুত এই পানি প্রবাহের ব্যবস্থা না করলে বিনেরপোতা এলাকায় বেতনা নদীর তীরে দেওয়া রিংবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়বে।
বিনেরপোতা এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ি সঞ্জয় কুমার বিশ্বাস জানান, প্রবাহ বন্ধ থাকায় গত বছর বর্ষা মৌসুমে খেজুরডাঙি এলাকায় বেতনার পানি প্রথমে বেড়িবাঁধ উপচে লোকারয়ে ঢুকতে থাকে। রাতের মধ্যে ওই বাঁধ ভেঙে গিয়ে প্রবল বেগে লোকালয়ে পানি ঢোকা শুরু করে। ফলে মাত্র ২/৩ দিনের মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা, বল্লি ও ঝাউডাঙ্গা এবং তালা উপজেলার নগরঘাটা, ধানদিয়া ও খলিসখালি ইউনিয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। এতে করে এসব এলাকার সহাস্রাধিক বিঘার মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, বেতনার পানি বৃদ্ধি পেলে ভাটায় নামার পাশপাশি কুলটির খাল দিয়ে সেই পানি কপোতাক্ষ নদে গিয়ে পড়ে। কিন্তু বেতনা নদীর গাবতলা এলাকায় ও কুলটির খালের মুখে বাঁধ দেওয়ায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি বৃদ্ধিও পাশপাশি কলারোয়া ও ঝাউডাঙ্গা এলাকার নব পানি এসে চাপ দিচ্ছে বিনেরপোতা এলাকায়। ফলে বাড়ছে বেতনার পানি। দ্রুত এই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না নিলে গত বছরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
নগরঘাটা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহব্বত আলী জানান, গতবছর বর্ষা মৌসুমে বেতনা নদীর পানি নিষ্কাশিত হতে না পারায় খেজুরডাঙি এলাকায় বাঁধ ভেঙে দুটি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছিল। নগরঘাটা ইউনিয়ন পুরোটাই পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছিল। ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। যা এখনো পুসিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। তিনি দ্রুত বেতনার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
লাবসা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহবায়ক শফিকুল ইসলাম বলেন, অব্যহত বুষ্টির কারণে বেতনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় লাবসা ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির দাবীতে বুধবার বিকালে দেবনগর এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন লাবসা ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী এব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকশৌলী মো. আব্দুর রহমান তাযকিয়া বলেন, আমি নিজে বুধবার বেতনা নদীর বিনেরপোতা এলাকা পরিদর্শন করেছি। নদীর পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য গাবতলা এলাকায় দেওয়া বাঁধের অংশ বিশেষ কেটে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হযেছে। আশা করছি দ্রুত বেতনার পানি ভাটায় নেমে যাবে।
খুলনা গেজেট/এএজে